জুমাদাল উলা ১৪২৯   ||   মে ২০০৮

ভুল রসম : ফাতেহায়ে ইয়াযদাহম-এর কোনো শরয়ী ভিত্তি আছে কি?

রসম ও রেওয়াজে অনুরক্ত লোকেরা দীর্ঘদিন থেকে ফাতেহায়ে ইয়াযদাহম নামেও একটি রসম পালন করে থাকে। ইয়াযদাহম শব্দের অর্থ হচ্ছে একাদশ। অর্থাৎ রবীউস সানীর এগারো তারিখে কৃত ফাতেহা বা ইসালে ছওয়াব মাহফিল। বলা হয়ে থাকে, এ তারিখে ওলীয়ে কামেল শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রহ.-এর ইন্তেকাল হয়েছিল। এজন্য তাঁর ওফাতদিবস পালন করার উদ্দেশ্যে এই রসমের সূচনা করা হয়। ওই আল্লাহর বান্দারা এ বিষয়টি চিন্তা করেনি যে, ইসলামে না জন্মদিবস পালন করা হয়, না মৃত্যুদিবস। না শায়খ জীলানী রহ. তাঁর কোনো শায়খের জন্মদিবস বা মৃত্যুদিবস পালন করেছেন, না তার কোনো খলীফা বা শাগরিদ তা পালন করেছেন। বলাবাহুল্য যে, এই ভিত্তিহীন রসম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চিন্তা করা আর তাতে ইসালে ছওয়াবের নিয়ত করা বাতুলতা মাত্র।

এদিকে মজার বিষয় এই যে, গিয়ারভীর এই রসম এ তারিখে এ জন্যই পালন করা হয় যে, এটা শায়খ জীলানীর ওফাতদিবস। আল্লাহর কী শান, এই ভিত্তিহীন রেওয়াজের উদযাপন দিবসের জন্যও একটি ভিত্তিহীন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।

 

যারা এটা পালন করে থাকে তাদের কর্তব্য ছিল ইলমে তারীখ এবং আসমাউর রিজালের দুচারটি কিতাব উল্টেপাল্টে দেখা যে, সত্যি সত্যিই তাঁর ওফাত এগারো তারিখে হয়েছে কি না?

আমরা তারীখ ও রিজালের অনেক গ্রন্থে শায়খ জীলানীর জীবনালোচনা পড়েছি। কোথাও এগারো রবীউস সানীর কথা নেই। আট, নয় বা দশ রবীউস সানী ৫৬১ হিজরীর কথা উল্লেখিত হয়েছে।

-দেখুন : সিয়ারু আলামিন নুবালা,  যাহাবী ১৫/১৮৯; আলমুনাতাযাম ইবনুল জাওযী : ১৮/১৭৩; যায়লু তবাকাতিল হানাবিলা, ইবনে রজব ১/২৫১; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/৩৯৫; শাজারাতুয যাহাব, ইবনুল ইমাদ ৪/২০২; তারীখুল ইসলাম, যাহাবী ৩৯/৬০

গত ১৮/০৪/০৮এ একটি দৈনিক পত্রিকায় দেখতে পেলাম, ফাতেহা ইয়াজদহমের প্রথাগত এক মাহফিলের জনৈক বক্তার কিছু কথা ছাপা হয়েছে। পীরে তরীকত ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মহাসচিব বলে বক্তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, শায়েখ জিলানী (রহ.) শরীয়ত ও তাসাউওফ বিষয়ের শিক্ষা পীর আবু সাঈদ মাখজুমী থেকে লাভ করেছেন।

অথচ শায়খের উস্তাদের নাম আবু সাদ মুখাররিমী, আবু সাঈদ মাখজুমী নয়। যাক এটি তো শুধু নামের ভুল।

কিন্তু অবাক হলাম যখন তার বরাতেই একথাও উদ্ধৃত দেখা গেল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তিনি মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন।

যদি কোন সাধারণ লোকের মুখেও এ কথা শোনা যেত তাহলেও অবাক হওয়ার মত ছিল। কারণ তাওহীদে বিশ্বাসী কোন মুসলমানের অজানা নয় যে, জীবন ও মরণ একমাত্র আল্লাহর হাতেই। এটি কোন মাখলুকের সাধ্যে নেই। থাকতেও পারে না। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করে মানুষ আল্লাহর ওলী হতে পারে, কিন্তু যে বিষয়গুলোর ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই রাখেন সেগুলোর কেউ অধিকারী হতে পারে না।

যদি ফাতেহায়ে ইয়াজদহমএর মাহফিলে এমন আলোচনা হয়ে থাকে তাহলে তো এটি শুধু রসম-রেওয়াজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শেরক ও বেদয়াতের প্রচারকও বটে। 

 

 

advertisement