জুমাদাল আখিরাহ ১৪২৯   ||   জুন ২০০৮

প্রাথমিক শিক্ষা-কার্যক্রমে ব্র্যাকের অন্তর্ভুক্তি : এই সিদ্ধান্ত কোমলমতি শিশুদের চরম ক্ষতি করবে

৩০ টি উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা-কার্যক্রমের সঙ্গে একটি বিশেষ এনজিও-ব্র্যাককে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার পর দেশের সর্বস্তর থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও স্মারকলিপি প্রদান অব্যাহত রয়েছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ও বাস্তবতাবিবর্জিত বলে মত প্রকাশ করেছেন।

তারা বলেছেন, যে এনজিও তাদের নিজেদের পরিচালিত শিক্ষা-কার্যক্রমেও সফল নয় তাদেরকে জাতীয় শিক্ষা-কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত করার পেছনে কোনো সদুদ্দেশ্য থাকতে পারে না।

দ্বীনী দৃষ্টিকোণ থেকেও আমরা এ সিদ্ধান্তকে শিশুদের জন্য চরম ক্ষতিকর বলে মনে করি। ইসলামে শিশুদের সম্পর্কে গভীর সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিশুর মধ্যে ঈমানী চেতনা বিকশিত করা এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও জীবনধারায় তাকে অভ্যস্ত করে তোলার প্রতি অত্যন্ত তাকীদ দেওয়া হয়েছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-তরজমা : হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর।

হাদীস শরীফে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জেনে রেখো, তোমরা সকলে দায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেককে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।

এজন্য পিতামাতা ও শিশুর অভিভাবকদের অপরিহার্য কর্তব্য হল, শিশুর ঈমান-আমলের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করা। এর জন্য অনুকূল পরিবেশ ও অনুকূল সাহচর্যের ব্যবস্থা করা এবং প্রতিকূল পরিবেশ ও প্রতিকূল সাহচর্য থেকে রক্ষা করা। এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা হলে এর পরিণাম শুধু শিশুর পক্ষেই ভয়াবহ হবে তা-ই নয়, দায়িত্বশীলকেও এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।

যারা এ দেশের নীতি-নির্ধারক অবস্থানে রয়েছেন তাদেরকে আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে,  দেশ ও জাতির জন্য অকল্যাণকর যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তাদেরকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। আখিরাতের জবাবদিহিতা তো রয়েছেই দুনিয়াতেও তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। তাদেরকে অবশ্যই এ দেশের জনগণের চেতনা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতে হবে। গুটিকয়েক গণবিচ্ছিন্ন ইসলাম বিদ্বেষী ও পাশ্চাত্যের লেজুড় সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। জাতীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীল হিসাবে  তো নয়ই, একজন মুমিন হিসেবেও নয়।

এ দেশের ইসলাম-বিদ্বেষী, কুরআন-বিদ্বেষী শ্রেণীটি বর্তমানে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। এদের আমরা চিনি না-এমন নয়, তবে এদের সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। এদের কৌশলে বিভ্রান্ত হওয়া অন্তত মুমিনের পক্ষে শোভা পায় না। কেননা, কুরআন এদের প্রকৃত পরিচয় অনেক আগেই তুলে ধরেছে। ইরশাদ হয়েছে. ‘‘কাফিররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ কর তাহলে আমরা তোমাদের পাপভার বহন করব। কিন্তু তারা তাদের পাপভার কিছুই বহন করবে না। তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।

‘‘তারা নিজেদের ভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সঙ্গে আরও কিছু বোঝা, আর তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করে সে সম্পর্কে কিয়ামত-দিবসে তাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে।’’-সূরা আনকাবুত ১২-১৩

বলাবাহুল্য, নিজ কর্মের দায় নিজেকেই বহন করতে হবে। কিয়ামত-দিবসে এই ধর্মদ্রোহী শ্রেণী তাদের আনুগত্যকারীদের দায় মোটেই গ্রহণ করবে না। তবে অন্যকে গোমরাহ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত থাকার শাস্তি অবশ্যই তাদেরকে পেতে হবে। এ দেশের বর্তমান দায়িত্বশীলগণ যদি কোনো কারণে বিভ্রান্ত হন এবং এ ধরনের জাতি-বিধ্বংসী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তবে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। মহান আল্লাহর দরবারে তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

আমরা মনে করি, যে প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে পাশ্চাত্যের মূল্যবোধ ও কুফরী জীবন-ব্যবস্থা  প্রবর্তন করতে চায় এবং অর্থনৈতিক ভাবেও এ দেশকে পরনির্ভরশীল করে রাখতে চায় এদের মাধ্যমে কখনো এ জাতির ও জাতির ভবিষ্যৎ-প্রজন্মের সৌভাগ্যের সূচনা হতে পারে না।  এ বিষয়ে সকল অভিভাবক ও দ্বীনদার মুসলমানের সোচ্চার হওয়া সময়ের দাবি।

 

 

 

advertisement