রবিউল আউয়াল ১৪৩১   ||   মার্চ ২০১০

আলেম সমাজঃ চব্বিশে ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ...

খলদুন

চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২ টায় ডাকা হয়েছিল একটি মহাসমাবেশ। ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ নামের ব্যানারে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ২৭ জন আলেমেদ্বীনের আহ্বানে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি চলছিল। সংবাদপত্রে দেওয়া বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে, ওই মহাসমাবেশটি ছিল বর্তমানে চালু কিছু জোরালো ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে। ‘একমুখী শিক্ষার নামে ধর্মহীন শিক্ষানীতি ’০৯ প্রণয়ন, সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল, ৭২-এর ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র ও কওমী মাদরাসাসমূহের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার প্রতিবাদে’ ডাকা মহাসমাবেশটির আহ্বায়কদের তালিকায় প্রথম নামটি ছিল চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেবের। তিনি দেশের অন্যতম প্রধান বরেণ্য আলেম এবং কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সম্মানিত সভাপতি। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকেই দেশজুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, মহাসমাবেশটি হতে দেয়নি পুলিশ। মহাসমাবেশের উদ্দেশ্যে যাত্রারত আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের গাড়িবহরে গুলি চালানো হয়েছে পথে। মারাত্মক আহত হয়েছেন অর্ধশত এবং গ্রেফতার করা হয়েছে অর্ধশত আলেম ও মাদরাসাছাত্রকে। পরদিনের সংবাদপত্রে দেখা গেছে ঘটনা সেরকমই ঘটেছে। পুলিশের অজুহাত ছিল তাদের কাছে সমাবেশের জন্য পূর্ব-অনুমতি নেওয়া হয়নি। আয়োজকরা বলেছেন মহাসমাবেশের জন্য ও মাঠ ব্যবহারের জন্য যথাযথ কর্র্তৃপক্ষ থেকে তারা অনুমতি নিয়েছেন। কিন্তু গোটা দেশের আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষ পরদিনের সংবাদপত্রে আহত মাদরাসাছাত্রসহ অ্যাকশনরত পুলিশের ছবি দেখে প্রচণ্ড মর্মাহত হয়েছেন ও তীব্র মনোকষ্টে ভুগেছেন। ঘটনার পর চট্টগ্রামের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল মাদরাসাছাত্ররা। বিরোধী প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া সরকারের হঠাৎ হয়তো টনক নড়ে উঠেছে। আলাপ-আলোচনা করে অবরোধ প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে একদিনের মধ্যেই। পূর্ব-অনুমতি না নেওয়ার অজুহাতে শীর্ষ আলেমদের সভামঞ্চ ভেঙ্গে দেওয়া, পথে কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুঁড়া এবং গ্রেফতার করার বিষয়টিকে গোটা দেশের আলেমসমাজ একটি বড় আঘাত হিসেবে নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শীর্ষস্থানীয় যে ক’জন আলেমের সঙ্গে তার অফিসে বসেছিলেন, এ ঘটনায় তাদের দু’একজন ছাড়া প্রায় সবাই বিক্ষুব্ধ হয়ে আছেন বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে এবং বিষয়টি সম্ভবত এখন আর ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটির সঙ্গে মূল ধারার আলেমসমাজের দূরত্ব কমানোর যে উদ্যোগ ওই বৈঠকে নেওয়া হয়েছিল এ ঘটনায় তার বিপরীতমুখি গতি তৈরি হয়ে গেছে। দেশের মূলধারার প্রধান আলেমসমাজ বাস্তবে প্রচলিত রাজনীতির অর্থে রাজনীতিতে কখনো জড়াতে চান না। তারা ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী মূল্যবোধ বিষয়ে কথা বলেন। প্রয়োজন হলে স্বল্প সময়ের জন্য নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মাঠে নামেন। কিন্তু তাদেরকে ন্যায্য কথাটি বলতে না দেওয়ার ফল মারাত্মক হয়ে থাকে। তাদের টুটি চেপে ধরা কিংবা তাদেরকে আঘাত করার জবাব কিছুটা দীর্ঘ মেয়াদী হয়। অর্থ, ক্ষমতা, কিংবা প্রভাবের ক্ষেত্রে কেউকেটা না হয়েও এদেশের জনমানুষের হৃদয়ে আলেমদের যে অধিষ্ঠান সেটার গুরুত্ব অনেক বেশি। পুলিশি ব্যরিকেড সেখানে ধুলির ঝড়মাত্র। প্রশ্ন জাগে, সরকারের যেসব অতিবুদ্ধিমান ব্যক্তিবর্গ আলেমসমাজকে নির্বিকার চিত্তে পুলিশ দিয়ে ঠ্যাঙানোর মতো কাজে ইন্ধন দিয়েছেন, তারা আসলে কার হয়ে কাজ করেছেন? তাদের ইন্ধনের মূল্য ও মাশুল কোনোটাই কম ওজনের হবে বলে মনে করা যায় না।

 

advertisement