শাওয়াল ১৪২৯   ||   অক্টোবর ২০০৮

ঈমানের কথা বলি ঈমানের কথা শুনি

আবদুল্লাহ মালিক

বন্ধুরা! চল আমরা ঈমান তাজা করি! ঈমানের কথা বললে, শুনলে, পড়লে আর চিন্তা করলে ঈমান তাজা হতে থাকে। 

তোমরা সবাই জান যে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে বহু নবী (আ.) পাঠিয়েছেন। নবীদের (আ.) আসল কথা একটাই ছিল। তা হল : ও মানুষেরা! তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না। আল্লাহ তোমাদের তৈরি করেছেন, তিনি সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা-খালিক্ব। আর তিনিই তোমাদের পালনকর্তা। তিনিই রিযিকদাতা। তিনি তোমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করতে। পরীক্ষা কীসের? হ্যাঁ, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর কথা মানে, আর কে তাঁর কথা মানে না-এই পরীক্ষা। আমিও আল্লাহর বান্দা, তোমাদের মতো মানুষ। আবার আমি আল্লাহ তাআলার নবীও বটে। আল্লাহ তাআলা এই কথাগুলো বলার জন্য আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। তোমরা যদি আমার কথা শোন, সেইভাবে চল যেইভাবে আমি বলি, তাহলে তোমরা দুনিয়াতে শান্তি পাবে, আর যখন আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে, সেখানে পুরস্কার পাবে, চিরকাল জান্নাতে শান্তিতে থাকবে । যে আল্লাহ তাআলার কথা মানবে না, তার জন্য দুনিয়াতে শান্তি তো নেই-ই, আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে যাওয়ার পর সে আরো কঠিন শাস্তি পাবে। তাই আমি বলি, ও মানুষেরা! তোমরা ঈমান এনে মুসলমান হয়ে যাও-একমাত্র আল্লাহ তাআলারই ইবাদত কর।

এই দাওয়াত হল সত্যের দাওয়াত। হক্বের দাওয়াত। এই দাওয়াত শুনে মানুষ সব সময় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যেত। কিছু মানুষ নবীর কথা শুনত আর মানত। তারা মুসলমান । আর অনেক মানুষই নবীর কথাগুলোকে গুরুত্ব দিত না। তারা বিভিন্ন যুক্তি খাড়া করত।

যারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে তাদের অবস্থা আসলে সবসময় ভালো। তাদের মনের ভিতর আল্লাহ তাআলা অনেক শান্তি ভরে দেন। তাদের কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না। কারণ, তারা তো আল্লাহ তাআলাকে ভয় পায়! আর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অনেক ভালোবাসেন। এমন কখনোই হয় না যে, আমি আল্লাহ তাআলার হব, আর আল্লাহ তাআলা আমার হবেন না।

মুসলমান যদি কষ্টে পড়ে আর  ধৈর্য্য ধরে আল্লাহ তাআলাকে ডাকতে থাকে  তাহলে আল্লাহ তার ডাক শুনবেনই! তার সাহায্য আসবেই।

ধৈর্য্য ধরা মানে হল, আল্লাহ তাআলার কথাগুলো মেনে চলা। তাঁর নবী যে শিক্ষা দিয়েছেন, সেটা পালন করতে থাকা। ধৈর্য্য  ধরে আল্লাহ তাআলার কথা শুনতে থাকলে, তিনি তাঁর প্রিয় বান্দার জন্য একটা রাস্তা খুলবেনই। তাই বলি :

আমি যেখানেই থাকি/মানুষের ভীড়ে অথবা একাকী/গ্রামে, শহরে, সমুদ্রে বা পাহাড়ে/যখনই আমার বন্ধুকে ডাকি/তিনি আমার সহায়/তিনিই তো আমার আশ্রয়/তাহলে বল ভাই, আর চিন্তা কী?

এই জগতের সবকিছু-মানুষ, জ্বীন, ফেরেশতা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, গাছপালা, নদী-নালা, সমুদ্র-পাহাড়, আকাশ-বাতাস, চাঁদ-সূর্য সবই তো আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি! সবকিছুর উপর তাঁর ক্ষমতা। সবকিছুই তার গোলাম বা বান্দা। সবই আল্লাহ তাআলার হুকুমে আছে; আবার সবই তাঁর হুকুমে নষ্ট হয়, ধ্বংস হয়, মারা যায়। কে কার ক্ষতি করতে পারে যদি আল্লাহ তাআলা না চান? কে কার উপকার করতে পারে যদি আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা না করেন? আমাদের প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার জন্য শত্রুরা তাঁর বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলেছিল। তারা ভাবল, আজ সে আমাদের হাত থেকে কোথায় পালাবে? আজ তাকে কে রক্ষা করবে? আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব কাফিরের সামনে দিয়ে সূরা ইয়াসিনের প্রথম আয়াতগুলো পড়তে পড়তে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন! কাফির পালোয়ানদের চোখের সামনে দিয়েই প্রিয় নবীজী বের হয়ে চলে গেলেন!

যাকে আল্লাহ বাঁচান তাকে আর কে মারবে?/যে আল্লাহর বন্ধুকে ধাওয়া করে/তার চোখে ধুলো; সে তো নিজেই মরবে!

কাফিররা তাঁকে দেখেইনি! তাদের কিন্তু তখন  চোখ চোখের জায়গাতেই ছিল। আমাদের প্রিয় নবীজী তো তাদের সামনে দিয়েই বের হয়েছেন! কিন্তু আল্লাহ তাআলার হুকুমে ঐ চোখগুলি নবীজীকে দেখতেই পারেনি।

যে চোখ আল্লাহ তাআলার হুকুমে দেখে, সেই চোখই আবার আল্লাহ তাআলার হুকুমে দেখে না। এটাই তো সত্যি, এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের এভাবেই বাঁচিয়েছেন, বাঁচান ও বাঁচাবেন।

 

যে আল্লাহ তাআলাকে মানে, তাঁর কথা সব সময় শোনে, তার জন্যেই তো সাহায্য ও পুরস্কার। আবার যে আল্লাহ তাআলার কথা মানে না, তাঁর কথা শোনে না, সেই বান্দার অবস্থা কিন্তু উল্টা! সে পায় শাস্তি আর শাস্তি। তোমরা নিশ্চয়ই হযরত মুসা (আ.)-এর নাম শুনেছ। হ্যাঁ, তিনি আল্লাহ তাআলার আরেক নবী ছিলেন, যাঁর নাম কুরআনে বহু বার এসেছে। তিনি কত বার দাওয়াত দিয়েছিলেন মিশরের বাদশা ফেরআউনকে! বারবার সাবধান করলেন, আল্লাহকে না মানলে শাস্তি হবে। শাস্তিটা হবে খুব কঠিন। সেটা সহ্য হবে না। ফেরাউন দমবার নয়। কী জীদ! নবীর কথা মানলই না! সে বলতে লাগল, আরে আমি বড় খোদা। ছি! আল্লাহর যমিনে তাঁর বান্দার কী স্পর্ধা! সে নিজেকে খোদা বলে! আবার বলে বড় খোদা! লজ্জা লাগে না, তওবাও করে না! অবশেষে যা হবার তা-ই হল। একটাই ছিল সুযোগ! হাতছাড়া করল ফেরআউন!

মানুষ যখন বড় খোদা সাজে/ডুবে মরে লোহিত সাগর মাঝে।

আল্লাহ তাআলার সাহায্যে মুসলমানদের নিয়ে হযরত মুসা (আ) যেইমাত্র লোহিত সাগর সহি সালামতে পার হলেন, সাঙ্গপাঙ্গ আর সৈন্যসামন্ত নিয়ে ফেরআউন সেই সমুদ্রের বুকেই ইঁদুরের মতো ডুবে মরল!

মুখে বলে আমি বড় খোদা/ডুবে মরে এরা সর্বদা।

আল্লাহ তাআলা শিক্ষা দিলেন-অহংকার করলে একদম ডুবানো হবে, চুবানো হবে, তখন আর আফসোস করে কানে ধরে হাজার বার উঠ-বস্ করলেও লাভ হবে না! পরীক্ষায় ফেল্! ডুবেছে আর চুবেছে ফেরআউন। আল্লাহর পরীক্ষায় ফেল! কী লজ্জার কথা, সর্বনাশের কথা! হে আল্লাহ! আমাদের বাঁচাও, আমরা মুসলমান হয়ে মরতে চাই! আমীন!

আরেক আল্লাহর বান্দাও নিজেকে খোদা দাবি করল আর আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা হযরত ইব্রাহীম (আ)কে মারার জন্য বিশাল আয়োজন করল।

সাহসটা দেখ! আগুন জ্বালিয়ে সে মারতে চায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাকে!

নমরূদ তো জ্বেলেছিল আগুন/ ইব্রাহীমের (আ:) জন্য সেটাই ছিল ফাগুন/ যাঁর দিলে রবের ভালবাসা/আগুনও হয় তাঁর শীতল বাসা।

নমরূদ যখন হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে আগুনে ফেলল, আল্লাহর বান্দা আগুন যেন ইব্রাহীম (আ.)-এর মেযবান হয়ে গেল! খুব ভালো মেযবান! মেহমানকে যে অনে-ক আদর-যত্ন করে! আল্লাহ তাআলার হুকুমে আগুন হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর জন্য একদম শান্তির জায়গায় পরিণত হল! এত বড় আগুন, তাও ইব্রাহীম (আ)-এর একটা পশমও পুড়াল না, অথচ একটা ছোট্ট মশা আল্লাহ তাআলার শত্রু নমরূদের জীবনটা যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ করে তুলল!

বন্ধুরা, আজ এতটুকুই। ইনশাআল্লাহ আবার  আরেকদিন তোমাদের ঈমানের কথা বলব। চল, এসব ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিই! আজ থেকে পাক্কা নিয়্যত করি আল্লাহ তাআলার সমস্ত কথা মেনে চলব।

হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমাকে মেনে চলার তাওফীক দাও! আমীন!

আমরা যেন  কোনোভাবেই আল্লাহ তাআলাকে ফাঁকি দেওয়ার ইচ্ছাও না করি! কারণ :

ফাঁকি তুমি কাকে দিবে? আল্লাহকে?/যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান-যমীন, জিন-ইনসানকে?/তিনি সব শুনেন! সব দেখেন!/মনের কথা-কল্পনা সবই জানেন ! 

 

 

advertisement