শাওয়াল ১৪২৯   ||   অক্টোবর ২০০৮

দ্বীন হেফাযতের মৌলিক কাজ : সুন্নাহর প্রতিষ্ঠা ও বিদআতের প্রতিরোধ

ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ

 

শুধু ইসলামই নয়, আসমান থেকে অবতীর্ণ যেকোনো শরীয়ত ও ধর্মকে বিকৃতির হাত থেকে সংরক্ষিত হলে জরুরি কাজ হল দুটি: এক. সংশ্লিষ্ট পয়গম্বরের সুন্নাহ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি যে তরীকা শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন সে তরীকা যথাযথভাবে ধরে রাখা। যেন তা থেকে কোনো কিছু বাদ পড়ে না যায়। দুই. তার পেশকৃত সুন্নাহর বাইরে গিয়ে নিজের খাহেশ ও খেয়াল-খুশি মতো কোনো তরীকা আবিষ্কার করে তার অনুসরণ না করা। প্রত্যেক নবীর উম্মতগণ যতদিন পর্যন্ত উপরোক্ত নীতিদ্বয়কে মেনে চলেছে ততদিন পর্যন্ত গুমরাহী তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। পক্ষান্তরে যখন থেকে তারা নবীর সুন্নাহ অনুসরণে গাফিলতি শুরু করল এবং কারো খাহেশ ও খেয়াল-খুশি মতো নেক আমল বানিয়ে তা অনুসরণ করল তখনই তারা হিদায়াত থেকে বিচ্যুত হয়ে গেল। পবিত্র কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

فَخَلَفَ مِنْۢ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوةَ وَ اتَّبَعُوا الشَّهَوٰتِ فَسَوْفَ یَلْقَوْنَ غَیًّاۙ۝۵۹

  তাদের পরে আসল একদল অপদার্থ অনুসারী যারা সালাত নষ্ট করল ও খেয়াল-খুশির অনুগত হল। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। -সূরা মারয়াম ১৯:৫৯

এ আয়াত নির্দেশ করছে যে, পরবর্তী অনুসারীদের জন্য উচিত ছিল পয়গাম্বর সালাতের যেই তালীম দিয়ে গিয়েছেন সেটি অবিকৃতভাবে ধরে রাখা। কিন্তু তারা অবিকৃতভাবে ধরে রাখেনি; বরং নষ্ট করে দিয়েছে। তাদের উচিত ছিল খাহেশ ও খেয়াল-খুশি মতো নতুন কিছু বানিয়ে তাতে সংযোজন না ঘটানো, কিন্তু তারা খেয়াল-খুশিরই অনুসরণ করেছে, ফলত তারা আল্লাহ তাআলার ভাষায় অপদার্থ অনুসারী; বরং কুকর্মের জন্য শাস্তির উপযুুক্ত বলে বিবেচিত হল। আয়াত একটি মূলনীতি নির্দেশ করছে যে, যেকোনো দ্বীনই সংরক্ষিত রাখতে হলে দুটি জিনিস জরুরি: এক. পয়গাম্বরের সুন্নাহকে ধরে রাখা ও প্রতিষ্ঠিত করা। দুই. নতুন কোনো তরীকা তখা বিদআতের আমদানী না করা; বরং প্রতিরোধ করা। আরো বুঝা যায় যে, কোনো ধর্মে সুন্নাহকে যত বেশি চর্চা করা হবে সেই ধর্মের বুনিয়াদ ততই দৃঢ়তা অর্জন করবে। পক্ষান্তরে বিদআতকে যত প্রশ্রয় দেওয়া হবে ধর্ম ততই দ্রুত বিদায় নিতে থাকবে। এ কারণেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতের পূর্বকালীন সময়ে উপরোক্ত দুটি জিনিসের দিকে উম্মতের সবিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উম্মতকে সুন্নতের উপর দৃঢ় ও মজবুত থাকতে এবং বিদআতকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে চলতে নির্দেশ দেন।

হাদীসে এসেছে-

عن العرباض بن سارية رضي لله عنه قال : ... فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم أوصيكم بتقوى الله والسمع والطاعة وإن كان عبد ا  حبشيا، فإنه من يعش منكم بعدي فسيرى اختلافا كثيرا فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين، تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجز وإياكم ومحدثات الأمور، فإن كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة. وفي رواية : وكل ضلالة في النار.

হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-আমি তোমাদেরকে অসীয়ত করছি, তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চলবে। তোমাদের নেতৃবৃন্দের নির্দেশ শুনবে ও মেনে চলবে। এমনকি সেই নেতা হাবশী গোলাম হলেও। আর তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরেও জীবিত থাকবে তারা শীঘ্রই দেখতে পাবে উম্মতের মধ্যে নানা রকমের মতভিন্নতা। (বিভিন্ন রকমের বিদআত, শ্রেণী বিভক্তি উম্মতকে খন্ড-বিখন্ড করে রাখছে) এসময় তোমাদের করণীয় হবে যে, তোমরা আমার সুন্নাহ ও আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নাহকে শক্ত হাতে ধরে রাখবে এবং মাড়ি দাতের সাহায্যে কামড় দিয়ে রাখবে। সাবধান! নতুন নতুন তরীকা ও পদ্ধতি থেকে দূরে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত তরীকাই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই হল গুমরাহী। অন্য বর্ণনায় আছে, আর প্রত্যেক গুমরাহীর পরিণতিই হল জাহান্নাম। -জামে তিরমিযী খ. ২, পৃ. ৯২; সুনানে আবু দাউদ খ. ২, পৃ. ২৭৯; সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ৭৫; মুসনাদে দারেমী পৃ. ২৬; মুসনাদে আহমদ খ. ৪, পৃ. ২৭

সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন-বিদায় হজ্জের ভাষণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

يا ايها الناس! إني قد تركت فيكم ما إن اعتصمتم به فلن تضلوا أبدا : كتاب الله وسنة نبيه.

হে লোকসকল! আমি তোমাদের কাছে এমন দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যে, তোমরা এ জিনিসদ্বয়কে যদি দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ তাহলে গুমরাহী কখনও তোমাদের স্পর্শ করতে সক্ষম হবে না। জিনিসদ্বয় হল, আল্লাহ তাআলার কিতাব ও তাঁর নবীর পেশকৃত সুন্নাহ। -আলমুসতাদরাক খ. ১, পৃ. ৯৩

عن جابر رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أما بعد! خير الحديث كتاب الله، وخير الهدي هدي محمد، وشرا الأمور محدثاتها وكل بدعة ضلالة.

হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বক্তৃতায় বলেন, সর্বোত্তম কথা হল আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত কথা। সর্বোত্তম পথনির্দেশনা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশিত পথনির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস হল দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট নতুন জিনিস। সকল বিদআতই হল গুমরাহী। -সহীহ মুসলিম #

 

 

 

advertisement