শাওয়াল ১৪২৯   ||   অক্টোবর ২০০৮

দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের সফলতা-ব্যর্থতা : দায়িত্বশীলদের জন্য গভীর চিন্তার খোরাক রয়েছে

অভিজ্ঞতা থেকে যে শিক্ষাগ্রহণ করে সে বুদ্ধিমান। ব্যক্তি-জীবন এবং জাতীয়-জীবন দুই ক্ষেত্রেই এটা সত্য। আর জীবনের অভিজ্ঞতা কখনো এক ধরনের হয় না। মধুর অভিজ্ঞতার মাধুর্য যেমন মানুষ উপভোগ করে তেমনি তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বাদও তাকে আস্বাদন করতে হয়। তবে সফলতা এবং ব্যর্থতা দু ধরনের অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব হলে ব্যর্থতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

দীর্ঘ দিন যাবৎ পরিচালিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সম্পর্কেও দায়িত্বশীল ও জনগণের যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তাতে অত্যন্ত গভীর চিন্তার খোরাক রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা কতটুকু সফল হতে পেরেছি-এই প্রশ্ন করার সময় সম্ভবত এসে গেছে। যদি সফলতার লক্ষমাত্রা অর্জিত না হয়ে থাকে তবে কেন তা হয়নি, তাও নির্মোহভাবে ভাবা দরকার।  এই  অভিযানের  সূচনা  যেভাবে  হয়েছিল  তাতে  দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়নি। বলা যায়, একটা নতুন অভিজ্ঞতা এদেশের জনগণ লাভ করেছিল। কিন্তু যতই দিন গড়িয়েছে সাফল্যের সূচক ততই নিম্নগামী হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কি এই সূচক শূন্যের কোঠায় গিয়ে পৌঁছবে?

যদি পরিশেষ তা-ই হয় তাহলে দেশের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে যে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে তার ব্যর্থতার কারণগুলো অনুসন্ধান করা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।

আসলে যে দুর্নীতি বছরের পর বছর ধরে চর্চিত হয়েছে এবং আরও বহু বছর ধরে শিক্ষা-দীক্ষায়, চিন্তা-চেতনায়, মানস ও মূল্যবোধে যার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে, সমাজ ও পরিবেশের চলমান ধারা থেকে যা আলো ও বাতাস গ্রহণ করেছে, প্রশ্ন এই যে, তা কি সাময়িক কোনো অভিযানের মাধ্যমে উৎপাটিত করা সম্ভব। আরও প্রশ্ন এই যে, যারা এই সব আয়োজন-অভিযান পরিচালনা করবেন তারাও কি এই সমাজেরই সন্তান নন, এই সমাজেরই আলো-বাতাস, শিক্ষা-দীক্ষা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের আবহে লালিত-পালিত নন, তাহলে তাদেরই বা কীভাবে এই চলমান ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে?

আমরা কি বিশ্বাস করি না যে, আমাদের সকল কাজকর্ম আমাদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধেরই ফলাফল। তাহলে বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সংস্কার ছাড়া আমরা কীভাবে আমাদের কর্মের পরিবর্তন আশা করি?

আমাদের ভাবতে হবে একদম গোড়া থেকে। আমাদের নৈতিকতার শিক্ষা বর্জিত শিক্ষা-ব্যবস্থা, ভোগবাদী জীবন-দর্শন, জবাবদিহিতার অনুভূতিশূন্য মন-মানস এবং সামাজিকভাবে এই সবের প্রতিষ্ঠা ও ব্যাপকতা-এইগুলোকে  অপরিহার্যভাবে ভাবনার বৃত্তে নিয়ে আসতে হবে।

আমরা মনে করি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির আমূল সংস্কার ছাড়া এই সব উপসর্গ থেকে আমরা কখনো পরিত্রাণ পাব না। দুদক প্রধানের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে মনে হয়েছে, তারা এই বাস্তবতা অনুধাবন করেন। একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অধীনে শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং আইন ও বিচার উভয় ক্ষেত্রেই আমূল সংস্কার অপরিহার্য। আইনের যথার্থ প্রয়োগ এবং আখিরাতের জবাবদিহিতা ভিত্তিক সমাজ-সংস্কৃতির ধারা প্রবর্তন ছাড়া দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে পরিত্রাণ লাভ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

এই সত্য যত দ্রুত আমাদের কর্ম ও পদক্ষেপে প্রতিফলিত করতে পারি ততই মঙ্গল।

 

 

 

advertisement