একটি ভুল ধারণা : ফাতিহা কি কিরাত নয়
কিরাত আরবী শব্দ। এর মূল অর্থ পাঠ করা। দ্বিতীয় অর্থ পঠিত বস্ত্ত বা পঠিত অংশ। কুরআন মজীদের যে কোনো অংশ পাঠ করা হোক তা কিরাত।
নামাযের প্রতি রাকাতে নামাযীকে প্রথমে ফাতিহা পড়তে হয়। এরপর ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে এবং সুন্নত -নফল নামাযের সব রাকাতে ফাতিহার সঙ্গে কুরআন মজীদ থেকে আরও কিছু অংশ পাঠ করা জরুরি। আম মানুষের ভাষায় এই পঠিত অংশ কিরাত নামে পরিচিত। এজন্য দেখা যায়, নামাযের ওয়াজিবসমূহের বিবরণ দেওয়ার সময় তারা বলেন, ১. প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া ২. সূরা মিলানো বা কিরাত পড়া। ...
দ্বিতীয় কথাটার অর্থ হল সূরা ফাতিহার পর কুরআন মজীদের কিছু অংশ পড়া। সেটা অন্তত সূরা কাউছার বা তার সমান বড় এক আয়াত বা আয়াতাংশ হতে হবে। যে এই বিষয়টাকে সূরা মিলানো বলছেন তার উদ্দেশ্যও এই নয় যে, পূর্ণ সূরা মিলানো ওয়াজিব। তদ্রূপ যারা ‘কিরাত পড়া’ বলছেন তাদেরও উদ্দেশ্য সূরা ফাতিহাকে কিরাত থেকে খারিজ করা নয়। সূরা ফাতিহা কুরআন মজীদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যাকে ‘আসসাবউল মাছানী’ নামে আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তাহলে এটা কিরাত হবে না কেন?
হাদীস শরীফে এসেছে-
وإذا قرء الإمام فأنصتوا
অর্থ : ‘যখন ইমাম পড়েন তো তোমরা নিশ্চুপ থাক।’ (সহীহ মুসলিম হাদীস : ৪০৪; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৮৪৬)
অর্থ পরিষ্কার যে, যখন ইমাম কুরআন পড়েন তো মুক্তাদীরা নিশ্চুপ থাকবেন। তরজমায় অনভিজ্ঞ কেউ কেউ এই হাদীসের তরজমা কখনও এভাবে করেন যে, ‘যখন ইমাম কিরাত পড়েন তখন তোমরা চুপ থাকবে।’ এই তরজমা সূক্ষ্ম নয়। তবে একে ভুলও বলা যায় না। কেননা ‘কিরাত পড়ার’ অর্থ কুরআন পড়া-সে ফাতিহা হোক বা কুরআন মজীদের অন্য কোনো অংশ।
এদিকে একশ্রেণীর মানুষ, যারা ইমামের পিছনে ফাতিহা পড়াকে ফরয বলেন তারা ‘কিরাত’ শব্দের লোক-অর্থের দ্বারা সুযোগ নিতে চান। তারা বলেন যে, ‘এই হাদীসে ইমামের কিরাত পড়ার সময় মুক্তাদীদেরকে চুপ থাকতে বলা হয়েছে, ফাতিহা পড়ার সময় চুপ থাকতে বলা হয়নি!’ অথচ কুরআন-হাদীসের পরিভাষায়, আরবী অভিধান ও ইলমী পরিভাষায় ফাতিহা পড়াকেও ‘কিরাত’ বলে। অতএব লোক-প্রচলনের সুবিধা নিয়ে উপরোক্ত কথা বলা হাদীসের অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কোনো কোনো কট্টর গায়রে মুকাল্লিদকে তো-নাউযুবিল্লাহ-বলতে শোনা যায় যে, ফাতিহা তো কুরআনই নয়। অতএব ইমামের ফাতিহা পাঠকালে মুকতাদীর চুপ থাকার প্রয়োজন নেই। দুঃখের বিষয় এই যে, ‘মযহাব’ রক্ষার জন্য এমনকি কুরআন অস্বীকার করাও তাদের জন্য সহজ!
কুরআন কাকে বলে এটা সবারই জানা আছে। কুরআনের প্রথম সূরা ফাতিহা এবং শেষ সূরা নাস। কুরআন খোলামাত্রই সূরা ফাতিহা চোখে পড়ে। অথচ তারা বলেন, ফাতিহা কুরআন নয়! একদিকে এই কুফরী ধারণা অন্যদিকে হাদীস অনুসরণের দাবি!
কত ভালো হত যদি আমাদের তাকলীদ-ত্যাগী আলেমগণ তাদের অনুসারীদের কিছু খোঁজখবর নিতেন এবং তাদেরকে এ ধরনের অন্যায় প্রান্তিকতা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতেন!
তাদের এটাও তদন্ত করা কর্তব্য যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এইসব কুফরী মতবাদ কাদের মাধ্যমে প্রচারিত হয়।