রবিউল আখির ১৪৩০   ||   এপ্রিল ২০০৯

কওমী মাদরাসা সম্পর্কে মিথ্যাচার : এই পলিসি কি সরকারকে সঙ্কট উত্তরণে সহায়তা করবে?

পিলখানার মর্মান্তিক হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে, সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। জনপ্রতিনিধি হয়েও তাঁরা জনগণ সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। দেশের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে অনেক বেশি প্রজ্ঞা ও সৎসাহসের পরিচয় দেওয়া সরকারের কর্তব্য।

গত কিছুদিন যাবৎ কওমী মাদরাসা সম্পর্কে বিষোদগার করা হচ্ছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই সুশীল সমাজদেশীয় বুদ্ধিজীবীদের একটি শ্রেণী কাগজ-কলম নিয়ে জঙ্গি আবিষ্কারে নেমে পড়েছিলেন। টার্গেট যথারীতি কওমী মাদরাসা। এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারের কোনো কোনো দায়িত্বশীলের মাঝেও তা সংক্রমিত হয়েছে।

সরকারের আইনমন্ত্রী তো রীতিমতো জঙ্গি উৎপাদনের প্রজননক্ষেত্রই আবিষ্কার করে ফেলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেক্ষেত্রে তো জঙ্গিতে দেশ ছেয়ে যাওয়ার কথা। তাহলে জঙ্গি খুঁজে বের করতে সাজানো নাটকের আশ্রয় কেন নিতে হচ্ছে? গ্রিন ক্রিসেন্ট নামের একটি বিদেশী এনজিওকে কওমী মাদরাসা নাম দিয়ে যে নাটক মঞ্চস্থ হল সেটা নিয়ে এখন সরকারের লেজেগোবরে অবস্থা! অনেকেই মনে করছেন যে, গোটা বিষয়টাই ছিল সাজানো ও পূর্বপরিকল্পিত। অভিযান শুরুর আগেই যদি তার ফলাফল মিডিয়ায় প্রচারিত হতে থাকে তাহলে তার বস্ত্তনিষ্ঠতা সম্পর্কে স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায়।

আমাদের ক্ষমতাসীনদের বোঝা উচিত, এদেশের কওমী মাদরাসাগুলো কোনো ভুইফোঁড় প্রতিষ্ঠান নয়। দেশের সাধারণ জনগণের সঙ্গে এর নাড়ির সম্পর্ক। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানগুলো তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত। সরকারের কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই জনগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এইসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত। সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও অশ্লীলতার সয়লাবের মধ্যেও এই খালেস দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামের মহান আদর্শের ধারক ও সংরক্ষক বলেই দেশের ইসলামপ্রিয় আমজনতা এগুলোকে তাঁদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বলেই মনে করেন।

কওমী মাদরাসাগুলো প্রকাশ্যেই দ্বীনী ও দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্য সকল     শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কওমী মাদরাসা জনসাধারণের জন্য অনেক বেশি উন্মুক্ত। এদের ব্যাপারে যাচ্ছে তাই প্রচার করলেই তা আম নাগরিকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে বিষোদগার, মিথ্যাচার ও অন্যায় প্রচারণা কতটুকু মঙ্গলজনক হবে তা সরকারের ভালোভাবে ভেবে দেখা উচিত।

১৯৯৬ এর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে যখন দেশে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল, তখনও কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। তখন অসংখ্য মাদরাসায় হয়রানি করা হয়, বহু নিরপরাধ ছাত্র-শিক্ষককে জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়। কিন্তু এত কিছু করেও সরকারের পক্ষে কওমী মাদরাসার জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি আমাদের অঘটন-ঘটন পটিয়সী মিডিয়াও কোনো স্বাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত করতে পারেনি।

এবারও দেখা যাচ্ছে, সরকার একই পথে অগ্রসর হচ্ছে। বিডিআরের মর্মান্তিক হত্যাকান্ড, সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংঘটনের সন্ত্রাস-তান্ডব, সীমাহীন টেন্ডারবাজি ও ভর্তিবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেই কি জনমানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে ফেরানোর উদ্দেশ্যে সরকার কওমী মাদরাসার দিকে আঙুল তুলছে? এতে কি তারা সঙ্কট-উত্তরণে সহায়তা পাবেন বলে মনে করেন?

আমরা মনে করি, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সরকারের কর্তব্য প্রকৃত সমস্যার দিকেই দৃষ্টি দেওয়া। আসল সমস্যা বাদ দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হলে সমস্যার সমাধান হয় না; বরং জটিলতা আরো বেড়ে যায়।

সরকার যদি মনে করেন, কওমী মাদরাসার দিকে আঙুল তাক করে তারা দেশের মানুষকে ভুলিয়ে রাখতে পারবেন তাহলে এটা হবে তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞাহীনতার এক হাস্যকর দৃষ্টান্ত। #

 

 

 

advertisement