জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩৬   ||   এপ্রিল ২০১৫

দ্বিতীয় আযানের জওয়াব : পূর্বের একটি উত্তরের বিশ্লেষণ

ইবনে খুরশিদ

মাধবপুর, সিলেট

প্রশ্ন : আলকাউসার জুমাদাল উলা ১৪৩৬ হিজরীতে মাসআলাটি পড়েছি যে,জুমআর দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া জায়েয। আমার জানা ছিল যে, এই আযানের জওয়াব না দেওয়া উচিত। একাধিক আলেম থেকে এমনটিই শুনেছি এবং তাদের এমন আমল দেখেছি।

আশা করি এই মাসআলাটি সবিস্তারে আলোচনা করবেন যেন আমার পেরেশানি দূর হয়।

উত্তর : জুমআর দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া হবে কি হবে না এ বিষয়ে হানাফী ফকীহগণের বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। একটি বক্তব্য এই যে, এই আযানের জওয়াব না দেওয়া উচিত। এর সপক্ষেও দলিল রয়েছে। আমাদের একাধিক আকাবির এই বক্তব্য অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন। সুতরাং আপনি একাধিক আলেম থেকে যা শুনেছেন বা যে আমল দেখেছেন তা ভুল নয়।

আলকাউসারে প্রকাশিত উত্তরটি একটু সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল এতটুকু বলা যে, কোনো কোনো কিতাবে (যেমন আহসানুল ফাতাওয়া (খণ্ড : ,পৃষ্ঠা : ১৩৫) দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়াকে যে স্পষ্টভাবে নাজায়েয বলা হয়েছে তা আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে দলিলের আলোকে মারজুহ। অর্থাৎ তা অগ্রাধিকারযোগ্য নয়।

আমাদের আকাবিরের মধ্যে হযরত মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রাহ. ইলাউস সুনান কিতাবে (খণ্ড : , পৃষ্ঠা : ৮০) এবং তাঁর ফতোয়া সংকলন ইমদাদুল আহকামে (খণ্ড : , পৃষ্ঠা : ৪১৯-৪২০) এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যার সারকথা এই যে, দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া নাজায়েয কিংবা মাকরূহে তাহরীমী হওয়ার মতটি দলিলের আলোকে অগ্রাধিকারযোগ্য নয়। আল্লামা আবদুল হাই লখনবী রাহ. আসসিআয়াহ খণ্ড : , পৃষ্ঠা : ৫৩), আততালীকুল মুমাজ্জাদ (পৃষ্ঠা : ১৩৮) ও নাফউল মুফতী ওয়াস সাইল (পৃষ্ঠা : ১৩৪) কিতাবসমূহে যা কিছু লিখেছেন তার সারকথাও তাই।

ফাতাওয়া রহীমিয়ায় (খণ্ড : , পৃষ্ঠা : ১৪৭) হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ কেফায়াতুল্লাহ রাহ.-এর এই উক্তি বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুতাআখখিরীন হানাফী আলেমগণ মুআবিয়া রা.-এর হাদীসের ভিত্তিতে মিম্বরের আযানের জওয়াব দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।

আর হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম মুআবিয়া রা.-এর উপরোক্ত হাদীসের অধীনে বলেছেন যে, ‘‘বোঝা গেল, ইমামের জন্য দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া উচিত। তবে মুকতাদি জওয়াব দিবে কি না-এ সম্পর্কে হানাফীদের দুটি বক্তব্য রয়েছে। আমাদের (একাধিক) বুযুর্গ এই ফতোয়া দিয়েছেন যে, মৌখিকভাবে জওয়াব না দিয়ে মনে মনেই জওয়াব দিবে।’’ -ইনআমুল বারী খণ্ড : , পৃষ্ঠা : ৯৪

সকল বক্তব্যের উপর দালীলিক আলোচনা করার অবকাশ এখন নেই। তবে আশা করি, সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, এতে পেরেশান হওয়ার কিছু নেই। আপনি সাধারণত যে আলেমের কাছে মাসআলা জিজ্ঞাসা করেন তার ফতোয়া অনুযায়ীই আমল করতে থাকুন। কিন্তু কোনো আলেম যদি হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ কেফায়াতুল্লাহ রাহ. ও হযরত মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রাহ.-এর তাহকীক মোতাবেক কাউকে দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেওয়া জায়েয হওয়ার ফতোয়া দেন আর মুসতাফতী সে অনুযায়ী আমল করতঃ দ্বিতীয় আযানের জওয়াব দেয় তাহলে তাকে নিষেধ করবেন না। 

 

 

 

advertisement