রবিউল আখির ১৪৩৬   ||   ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বেদে সমাজ : দাওয়াতের এক অবহেলিত অঙ্গন

প্রফেসর দেওয়ান মুহাম্মাদ আজিজুল ইসলাম

ঢাকা থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং-এ গিয়েছিলাম। তখন ছিল যোহরের সময়। কাঠের খাটিয়ার উপরে ধবধবে সাদা চাদরে ঢাকা একজন মধ্য বয়সী লোকের মৃতদেহ মাঠের মধ্যে এনে কাঁধ থেকে নামান হল। কেউ একজন দেখতে চাইলে মুখের উপরের কাপড় একটু সরানো হল। বের হল এক আধাপাকা দাড়িওয়ালা সৌম্য-শান্ত মুখ।

চেহারায় কোনো মলিনতা নেই। মনে হচ্ছে তিনি আরামের নিদ্রায় গেছেন। মুখের উপরে দুপুরের রোদের তীব্রতা তার ঘুমের যেন কোনো অসুবিধা করতে পারেনি। মুখটা আবার ঢেকে দেওয়া হল।

মাঠটা ছোট। টুপি মাথায় কিছু লোক বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। পাশেই একটা মসজিদ। সেখানে যোহরের নামাযের জামাত হচ্ছে। অল্পক্ষণ পরেই নামায শেষ হল। কিছু লোক মসজিদ থেকে বের হয়ে মাঠের কাছে এল। লাশের নাম শুনে আফসোস করল। বলল, লোকটা বড় ভালো মানুষ ছিল। নিয়মিত মসজিদে নামায পড়ত। কারো কারো মুখে এ ধরনের আরো কিছু ভালো উক্তি। ইমাম সাহেব মসজিদ থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে না এসে দক্ষিণ দিকের রাসত্মা ধরে বাজারের দিকে চললেন। তিনি ঐ দিকেই থাকেন। তার সঙ্গে আরো কিছু লোক। মাঠে দাঁড়ানো কিছু লোক তাকে জানাযার নামাযটা পড়িয়ে যেতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু ইমাম সাহেব এলেন না। তার নাকি খুব জরুরি কী একটা কাজ আছে। অন্য কাউকে দিয়ে নামায পড়িয়ে নিতে বললেন। সঙ্গে যে সব লোক ঐ দিকে যাচ্ছিল তারাও কেউ ফিরল না। তবে একজনের একটু অস্পষ্ট উক্তি ভেসে এল- ‘বাইদ্যার জানাযার নামাযে ক্যাডা যাইব।’ কথাটা শুনে মনে সন্দেহ হল, হয়ত এটা আত্মহত্যাকারী বা অপরাধী কোনো লোকের লাশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তা নয়। ঐ নামাযী লোকটি যেহেতু পেশায় ‘বেদে’ সেজন্য নামাযী মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তার জানাযার নামাযে ঐসব মানুষ অংশ নিলেন না। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। অল্প কয়েকজন মানুষ অন্য একজনের ইমামতিতে জানাযার নামায পড়লেন। মাঠের মাঝে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কাতারে বাজারের কিছু পথচারী ও দোকানদার অংশ নিলেন।

জানাযা শেষে মৃতদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হল। ভাবতে অবাক লাগল, একজন মুসলমানের লাশের সঙ্গে এ কেমন আচরণ! এর পেছনে যদি কিছু বাস্তব কারণও থাকে তবে সেগুলো সংশোধনের উপায় খোঁজা যায় না!

বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশাজীবী মুটে, মজুর, কৃষক, শ্রমিক, জেলে, কুমোরদের মতো এরাও একটি প্রচলিত পেশা অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদেরকে বেদে বা বাইদ্যা বলা হয়।

মরুভূমি বা সমভূমির যাযাবরদের মতো এরাও আমাদের দেশের এক ধরনের যাযাবর। জীবন ও জীবিকার জন্য প্রচলিত এই পেশায় যারা জড়িত তারা সাধারণত নৌকায় বাস করে। এ সম্প্রদায়ের মেয়েরা কাঁচের চুড়ি, খেলনা বা হালকা প্রসাধনী ইত্যাদি নিয়ে গ্রামেগঞ্জে ফেরী করে ব্যবসা করে। কেউ বা ‘বাতের ব্যাথার’ চিকিৎসায় ‘সিংগা’ লাগান। গাছের শেকড়-বাকল, জুড়ি-বুটি ইত্যাদি নিয়ে চিকিৎসা করেন। পুরুষেরা সাধারণত সাপের খেলা দেখান, সাপ ধরেন, সাপ কামড়ালে ওঝা হয়ে তার চিকিৎসা করেন। কেউ বা বাজারে খেলা দেখিয়ে সংসারের চাকা সচল রাখেন। ক্ষেত্রবিশেষে একাকী, যৌথ বা দল বেঁধে তাদের এই ব্যবসার কার্যক্রম চলে।

লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, বেদেদের জীবনযাত্রার সঙ্গে কিছু কিছু কারণে সাধারণ মুসলমানরা দূরত্ব বোধ করেন। দৃষ্টিকটুভাবে ও প্রদর্শনের মতো করেই নারীদেরকে জীবিকার জন্য পথে পথে নামিয়ে দেয়া, নারীদের মাধ্যমে সিঙ্গা লাগানো, তুকতাক অবৈধ তাবিজ-তদবির  (যেসবের সঙ্গে শিরকী তন্ত্রমন্ত্রের সম্পর্কই বেশি) ও সাপের খেলা দেখিয়ে আয়-রোজগার করা এ দূরত্বের অন্যতম কারণ। তাদের পেশা ও জীবন সাধারণ সমাজবদ্ধ মুসলিম জীবনাচার থেকে দ্বীনীভাবেও একটু ভিন্ন রকম। এজন্য তাদেরকে এড়িয়ে চলার অভ্যাস হয়ে গেছে অনেকের মাঝে। বিয়েশাদিসহ সামাজিক কাজকর্ম ও জানাযাতেও এরই প্রভাব পড়ছে বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে মুসলমানদের একটি ছোট্ট অংশকেও দিনের পর দিন দূরে সরিয়ে রাখা কি সমীচীন! দাওয়াত ও ইসলাহর মাধ্যমে জীবন পাতার ‘অশালীন, বিচ্যুত ও অপছন্দনীয় অনুশীলন’ থেকে তাদের সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া তো দরকার। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বেদে পল্লী আছে। এর মধ্যে ঢাকার সাভার, নাটোরের সিংড়া, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং অন্যতম। পার্বত্য চট্টগ্রামেও বেদে পল্লী আছে। সাভারের বেদে পল্লী অবশ্য সাপ নিয়ে বেশি কারবার করে। বাংলাদেশের মোট বেদের সংখ্যা আট থেকে দশ লাখের মতো। প্রতি অঞ্চলে দলের একজন দলপতি থাকেন। তার আদেশই আইন। সবাই সর্দারকে মেনে চলে।

বিশিষ্ট লেখক ও আলেমেদ্বীন মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী, ফরিদাবাদ জামেয়ার মুফতী মাওলানা ইমাদুদ্দীন ছাহেবসহ নয়-দশ জন দ্বীনের খাদেমদের একটি জামাত সরেজমিনে এ বছরের (’১৪) ৪ এপ্রিল লৌহজং বেদে পল্লীতে যাওয়ার মনস্থ করেন। বড় মাইক্রোবাসে আসন প্রতুল। কীভাবে যেন আল্লাহর অপার অনুগ্রহে আমাদের মত কিছু সাধারণজনেরও ঠাঁই হয়ে গেল। অনেকটা সেরকম যেভাবে জমিতে ফসলের ভেতরে আগাছারও ঠাঁই হয়।

পূর্বকথা অনুযায়ী আশেপাশের সব মসজিদের ইমাম ও অন্য মাওলানাগণ সেখানে এসে সমবেত হয়েছিলেন। মাওলানা জালালাবাদী ছাহেব তাদের উদ্দেশে কিছু কথা রাখলেন। তিনি ক্ষুদ্র কোনো পেশার কারণে মুসলমানদের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অবজ্ঞা করার শরয়ী নিষেধাজ্ঞার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন।

নামাযের সময় হয়ে আসছিল। সুতরাং তার কথার বিরতি দিয়ে বেদে পাড়ার নূতন হওয়া একটি মসজিদের দিকে গাড়ী রওয়ানা হয়ে গেল। নূতন তৈরী হওয়া এই মসজিদটি ইসলামী বিশ্বকোষ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক মরহুম অধ্যাপক মাওলানা ওমর আলী রাহ.-এর উদ্যোগে ও সহযোগিতায় তৈরী হয়েছে। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো মসজিদের অবস্থা আমাদের শহরের মসজিদের মত হত। বর্তমানে চারদিকে টিনের বেড়ার উপরে টিনের ছাপড়াঘর। গ্রামের একজন মাতবক্ষর তাড়াতাড়ি করে দোকান থেকে কিছু ঠান্ডা পানি ও ঠান্ডা পানীয় এনে দিলেন। নিজে তিন চিল্লার সাথী। সকলের শ্রদ্ধেয়। মসজিদের দেখভাল করেন।

জনালা দরজা দিয়ে বেশ কিছু ছোট ছেলে-মেয়ে উৎসুকভাবে আমাদের তাকিয়ে দেখছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে, এরা সকালে এই মসজিদেই পড়ে। বর্তমানে ৪০/৫০ জন পড়ে। আগে অনেক বেশি হত। তা প্রায় ১৫০/২০০। ঠিকমতো পড়া হয় না। উসত্মাদ ঠিকমতো আসেন না। ছেলেরাও সে জন্য পড়া ছেড়ে দিয়েছে। একজন মাস্টার রাখতে পারলে ভালো হত।’ কিন্তু বেতন দেব কোথা থেকে’ জানালেন মুরবক্ষী। কথাটা মনে হল অতিশয়োক্তি নয়। দারিদ্র্য যেন চারিদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে। কলোনীর মতো জীবনযাত্রা। সচ্ছলতার মুখ কোথাও উঁকি দিচ্ছে না।

আমাদের একজন সফরসঙ্গী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে কথা দিলেন যে, তিনি এই মাদরাসার জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করবেন এবং ফাউন্ডেশন থেকেই তার বেতনের ব্যবস্থা করে দেবেন। আমাদের সঙ্গে একজন স্থানীয় ভদ্রলোক ছিলেন। তিনিও আমাদের সঙ্গেই গাড়ীতে এসেছিলেন। তাঁকেই প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করে শিক্ষকের নিয়োগ তরান্বিত করার দায়িত্ব দেওয়া হল। আমার মনে একটা বিকল্প চিমত্মা এল। মসজিদটা উত্তর দক্ষিণে আনুমানিক ২০ হাত লম্বা। তারপরে এক ফালি জায়গা আছে যেখানে অনায়াসে ১০ হাত বাই ২০ হাত পূর্ব পশ্চিম লম্বা একটা ঘর বানানো যেতে পারে, যেটা মক্তব বা মাদরাসা হিসাবে কাজ দিবে। লৌহজংসহ আশেপাশের বিভিন্ন শহরে এমন মহৎপ্রাণ অনেক দানশীল মানুষ আছেন যিনি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে ওখানে একটি ঘর উঠাতে পারেন। তারপর প্রতিমাসে একজন শিক্ষকের বেতন দেওয়া তার জন্য কোনো সমস্যার কারণ হবে না। একদম নিঃস্বার্থভাবে দ্বীনের খেদমত করার এতবড় সুযোগ সহজে পাওয়া যাবে না। আখেরাতে এর জন্য যে পুরস্কার পাওয়া যাবে সেটা অকল্পনীয়। দরকার শুধু তাদের কাছে এই পরিকল্পনাটা ভালোভাবে উপস্থাপন করা। কিন্তু কে নিবে এ উদ্যোগ?

এরপর আরও একটা মসজিদ দেখতে যাওয়ার কথা। পথে অনেক প্রসঙ্গ উঠল। জানা গেল যে, এখন এখানকার অনেক বেদেরাই আগের মতো কাঠের টং-এ বসবাস করেন না। অনেকেই জায়গা কিনে স্থায়ী বাড়ি বানিয়েছেন। নদীর নাব্যতা থাকাবস্থায় প্রায় ৪০০ নৌকায় চার শ পরিবার থাকত ।

আগে তারা অস্থায়ীভাবে থাকত। কিন্তু নদীর নাব্যতা না থাকায় বাধ্য হয়ে জমি কিনে এখন তারা অনেকেই স্থায়ী বাসিন্দা।

দোকান-পাট ও বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে তারা থিতু হয়েছেন। ২/১ টা বাড়ি বেশ নকশাদার দৃষ্টি নন্দনভাবে বানানো। বেদে পল্লীর মাওলানা এই এলাকায়ই থাকেন। গল্পের প্রসঙ্গে একজন বেদে সর্দার জানালেন, খৃস্টান মিশনারীরা এখানে এসে তাদেরকে অনেকভাবে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেছে। নৌকার বদলে জমি কিনে বাড়ি তৈরী করার লোভও অনেক দেখিয়েছে। সবাই সর্দারকে দেখিয়ে দিয়েছে। সর্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সর্দার সাহেব নাকি উত্তর দিয়েছেন- ‘আমাদের একজন নেতা আছেন, আমরা তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলি’। কে সে নেতা জানতে চাইলে সর্দার উত্তর দিয়েছেন- ‘আমাদের নেতা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমরা তার কথা মতোই চলি।’ এরপরেও তাদের পক্ষ থেকে কিছু বিক্ষিপ্ত যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তাদের চেষ্টা কোনো কাজে আসেনি।

শুনে অবাক লাগল। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ অনেক জেলাতেই খ্রিস্টান মিশনারীরা বিক্ষিপ্তভাবে কিছু সফলতা অর্জন করেছে। কিন্তু বেদে পল্লীতে তারা শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে। ভাবলে অবাক হতে হয় যে, বেদে পল্লীর কিছু ভাই-বোনেরা ঈমানের দিক দিয়ে কত সবল! মাওলানা কথা প্রসঙ্গে জানালেন যে, তিনি দাওরায়ে হাদীস পড়া সত্ত্বেও অনেকেই তার পেছনে নামায পড়তে চায় না এ কারণে যে, তিনি বেদে সম্প্রদায়ের লোক। অল্প শিক্ষিত যেসব ইমাম সাহেবদের সূরা কেরাত অশুদ্ধ তাদের পেছনেও তারা একতেদা করতে রাজী কিন্তু বেদে আলিমের পিছনে তারা এক্তেদা করতে রাজী নন।

নতুন মসজিদের নির্মাণকাজ চলছে। পাকা ও মজবুত করেই এ মসজিদটি বানানো হচ্ছে। মাওলানা এখানে বিনা বেতনে ইমামতি করেন এবং মাদরাসাও সেভাবেই চালান। প্রায় দেড় শ ছাত্র-ছাত্রী। মসজিদ হয়ে গেলে আরও বাড়বে বলেও তার আশা। আমরাও তার আশাবাদের সঙ্গে আমীন বললাম।

রাস্তার পশ্চিমে মসজিদ আর পূর্ব দিকে একটি মরা খাল। বাচ্চারা সেখানে খেলাধুলা করছে। মাওলানা বললেন, এটা একটা শাখা নদী। এখন মরা বলে মনে হলেও আগে এ খালের যৌবন ছিল। এখন অনেক বাড়ি দোকানসহ জায়গাটা সাধারণ আর পাঁচটা বসতির মতো চেহারা নিয়েছে। নৌকা আর এখানে ভিড়ে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, শেষ পর্যন্ত নৌকার জীবন শেষ হয়েই যাবে। পাকা মসজিদ হচ্ছে। অনেক টিনের বাড়ি হয়েছে। কিছুদিন পরে হয়ত পাকা দালান উঠবে। হাঁটতে হাঁটতে বিভিন্ন রকম কথা হল।

এর মধ্যে কথা প্রসঙ্গে জানা গেল যে, এর পাশের গ্রামেই এই সম্প্রদায়ের দুইটি ছেলে মেয়ে (ভাইবোন) তাদের পরিচয় গোপন রেখে কলেজে পড়ছে। মাওলানা সাহেবরা আসবেন শুনে তারা তাদের কলেজ থেকে বাসায় এসেছেন। খবরটা আমাদের খুব আনন্দ দিল। তখনই ঐ গ্রামে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাই মিলে ঐ গ্রামের পথ ধরলাম।

মাওলানা জালালাবাদী ওদের দেখে এতই খুশি হলেন যে, সফরকারী দলের একজনকে বলেই বসলেন, তোমাদের মতো কোনো এক মাওলানার এদের সঙ্গে আত্মীয়তা করা উচিত। তাহলে এদের শিক্ষার যেমন মূল্যায়ন হবে তেমনি তোমরা এই সমাজের নৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে মূল্যবান অবদান রাখতে পারবে। এদের মেয়েরা যেভাবে চলাফেরা করে শরীয়ত যে সেটা সমর্থন করে না এটা তো তাদের জানাতে ও বুঝাতে হবে। শতাব্দির অবক্ষয় ও অশিক্ষা এদের চলাফেরার ক্ষেত্রে যে সামাজিক মান নির্ধারণ করে দিয়েছে তা থেকে রাতারাতি উত্তরণ সম্ভব নয়। এর জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে এবং হয়ত অনেকদিন সময়ও লাগবে। তবে আজকের এই সফরের পরে আমরা সবাই আশাবাদী যে, এদের পরিবর্তনের সুবাতাস বইতে খুব বেশি সময় লাগবে না ইনশাআল্লাহ।

সবাই গাড়ীতে উঠলাম। গাড়ীর চাকা ক্রমে ঢাকার দিকে এগুতে লাগল। আসরের নামাযের সময় হয়ে গেছে তাই ঐ গ্রামটি ছেড়ে এসে পথেই কাজী বাড়ী মসজিদে জামাতে নামায আদায় করলাম। নামায শেষে মাওলানা এখানেও বেদে পল্লীর মানুষদের সঙ্গে যেন অমুসলিমসূলভ আচরণ না করা হয় সে বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করলেন। বললেন, রোযকিয়ামতে বিচারের কাঠগড়ায় আমাদেরকেও আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবেন। সেই কঠিন দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এখন থেকেই সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানালেন। তারাও নিজেদের ভুল স্বীকার করলেন। এখন থেকে এসব অন্যায় ও কুপ্রথা দূর করার জন্য চেষ্টা করবেন বলে কথা দিলেন। 

 

 

advertisement