রবিউল আখির ১৪৩৬   ||   ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রসঙ্গ-পেট্রলবোমা : এক চরম অন্যায়, রোমহর্ষক নির্মমতা!

ল্লাহর ভয় না থাকলে মানুষ যে আর মানুষ থাকে না এর বিভিন্ন উদাহরণ মাঝেমধ্যেই প্রকাশিত হয়। কিন্তু কিছু উদাহরণ মনই রোমহর্ষক যে, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সাম্প্রতিক নৃশংসতম উদাহরণটি হচ্ছে, মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে কতগুলো মানুষ- নারী, শিশু, যুবক অগ্নিদগ্ধ হলেন! আমরা এ প্রশ্ন করব না যে, কী তাদের অপরাধ। কোনো অপরাধীকেও কি এভাবে অগ্নিদগ্ধ করার সুযোগ আছে?

এদের কেউ মারা গেছেন, কেউ মৃত্যুশয্যায়। যারা বেঁচে থাকবেন তাদের এখনকার তীব্র দহন-যন্ত্রণার পর সারা জীবন এ দহন-ছাপ বহন করতে হবে। এই মানুষগুলোর কাছে কী জবাব আছে এই জাতির, এই জাতির অভিভাবকগণের এবং এই জাতির বিবেক-নির্মাতা-কারিগরবৃন্দের?

আমরা জানি না, কারা এই চরম অন্যায় সংঘটন করেছে ও করছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো এজন্য একে অন্যকে কড়া ভাষায় দায়ী করে যাচ্ছে। আমরা এ-ও জানি না, কারা এই চরম অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা দান করছে। আমরা প্রচলিত রাজনীতির নোংরামি থেকে ও রাজনীতির ভাষায় কথা বলা থেকে দূরে থাকতে চাই। আমরা বেদনা ও কল্যাণকামিতার সাথে সকল পক্ষের সম্মুখে এ কথাটি বলতে চাই যে, যারা এ চরম অন্যায় করছেন আর যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন তারা কিন্তু নিজেদের কর্ম-সম্পর্কে অবগত। তাদের আরো অবগত থাকা উচিত যে, যুলুমের পরিণাম যালিমকে ভোগ করতেই হবে। আখিরাতেও এবং দুনিয়াতেও। কারণ আখিরাতের শাস্তির পাশাপাশি দুনিয়াতেও যেসব কারণে আল্লাহ তাআলার শাস্তি নেমে আসে তার অন্যতম হচ্ছে যুলুম।

যারা এই যুলুম করছে তাদের প্রথমেই নিজের চিন্তাধারা সংশোধন করা দরকার। যে অপরাধ পৃথিবীতে কেউ দেখে না তা-ও আল্লাহ দেখেন, যা কেউ জানে না তা-ও আল্লাহ জানেন। সুতরাং অপরাধীর নিস্তার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। ঐ মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর দরবারে সবাইকে একা একা হাজির হতে হবে। তখন কোনো নেতা, কোনো দল সঙ্গে থাকবে না, কোনো বাহানা, কোনো অজুহাত কাজে আসবে না। সুতরাং ঐ লোকের চেয়ে বড় হতভাগ্য আর কে হতে পারে, যে অন্যের দুনিয়ার জন্য নিজের আখিরাত বরবাদ করে?

আমাদের চারপাশের জীবন-প্রবাহ এ অমোঘ বাস্তবতার জ্বলন্ত উদাহরণ যে, আল্লাহ-বিস্মৃতির পরিণাম আত্ম-বিস্মৃতি। যার মনে আল্লাহর ভয় নেই, যার মসিত্মষ্কে আল্লাহর স্মরণ নেই তার তো নিজেরও পরিণামের চিমত্মা নেই, নিজেরও নাজাতের ও মুক্তির চেতনা নেই। এ জাতীয় আত্ম-বিস্মৃত মানব-শ্রেণির পক্ষেই সম্ভব সব ধরনের অমানবিক কার্যকলাপ সংঘটিত করা।

আখেরাতে জবাবদিহিতার চিন্তা বিদায় নিলে সাধারণ মানবিকবোধও বিদায় নেয় এসকল ঘটনা তারও উদাহরণ। সাধারণ মানবিক চিমত্মা না থাকুক, ‘দলীয়’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ মানবতাবোধও তো থাকে না। কারণ যে মানুষটি অগ্নিদগ্ধ হল বা হতে পারে তার পরিচয় তো জানা নেই। তিনি তো আমার দলের, আমার মতের লোকও হতে পারেন! তাহলে ঐ অগ্নি-নিক্ষেপকারী ব্যক্তি বা দলের জন্য এর চেয়ে বড় পরিহাসের ব্যাপার আর কী হতে পারে?

নাকি এসবও এখন বিবেচনার বিষয় নয়? কী তবে বিবেচনার? নাকি আমরা এতখানি ‘প্রাগ্রসর’ যে, সব রকমের ‘সুবিবেচনা’কেও অতিক্রম করে গেছি! এত উন্নত ‘মানব’ যে মানবতাকেও ‘ছাড়িয়ে’ গেছি!

আমাদের আশার স্থল ঐসকল মানুষ, যাদের অমত্মরে ঈমান ও বিশ্বাসের কিছুমাত্র আলোও আছে। তাদের তো কিছু না কিছু মানবতাবোধ ও বিবেচনা-বোধ থাকার কথা। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, দল, মত ও রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে কিছু মানুষের মধ্যে এখনো তা আছে। কিছু মানবতা আছে, কিছু বিচার-বিবেচনা আছে। তাদের কাছে হয়তো এ আহবান অর্থহীন হবে না।

আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণী স্মরণ রাখুন-

إن النار لا يعذب بها إلا الله

অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া আর কারো অধিকার নেই আগুন দ্বারা শাস্তি দেওয়ার। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩০১৬ অন্য হাদীসে আছে, তিনি একটি পিঁপড়ার ঢিবি আগুনে পোড়ানো দেখতে পেয়ে হুঁশিয়ার করেছেন-

إنه لا ينبغي أن يعذب بالنار إلا رب النار

আগুনের রব ছাড়া অন্য কেউ আগুন দ্বারা কষ্ট দিতে পারে না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৬৬৮

তাহলে নিরপরাধ মানুষকে আগুনে পোড়ানো যে মারাত্মক যুলুম তা তো খুব সহজেই অনুমেয়।

 

advertisement