সফর ১৪৩১   ||   ফেব্রুয়ারী ২০১০

বিষাক্ত শিশুখাদ্যে বাজার সয়লাব

শিশুদের আকৃষ্ট করতে স্কুলের বাইরেই নানা বাহারি খাবার। ফেরিওয়ালা থেকে দোকান সব জায়গায় নানা রঙের চিপস, চকোলেট। অভিভাবকরাও জানেন না, তারা শিশুদের কী খাওয়াচ্ছেন। শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু বিশেষজ্ঞরা জানান, এখন শিশুদের মধ্যে কিডনি, লিভার ও স্নায়ুরোগ ব্যাপক মাত্রায় বাড়ছে। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী। রাজধানীসহ সারা দেশে চিপস, ওয়েফার, চকোলেটসহ নানা ধরনের খাদ্যপণ্য শিশুদের অত্যন্ত প্রিয়। কিন্তু এগুলোর বেশির ভাগই নকল বা ভেজালযুক্ত। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনেই বিক্রি হচ্ছে এসব ক্ষতিকর খাবার। কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে চিপস খায় না এমন সংখ্য খুবই কম। আর শিশুরা এসব খাবার পছন্দ করে বলে অভিভাকরাও তাদের কিনে দেন। এসব মুখরোচক খাবারের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্যও বিক্রি হচ্ছে। অভিভাবকরা বিদেশী পণ্য মনে করে দাম দিয়ে শিশু-কিশোরদের এসব খাবার কিনে দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশ থেকে এসব খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয় ঠিকই। তবে মেয়াদের যে সময় থাকে তা বাড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েক গুণ। এক বছরের মেয়াদ বাড়িয়ে দুই বছর বা তিন বছর করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার বিষের মতো। তাই এসব খাদ্য গ্রহণ করলে শিশুদের মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। রাজধানীর আশপাশেই শতাধিক ভেজাল খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিঠান আছে। বেশি বিক্রি হয় বলে তারা শিশুখাদ্য উৎপাদনে আগ্রহী। পুরান ঢাকা, ডেমরা, কেরানীগঞ্জে এসব কারখানায় উৎপাদিত মুখরোচক ভেজাল শিশুখাদ্য সারা দেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। সমপ্রতি র্যা বের সহযোগিতায় ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট এ ধরনের একটি কারখানার সন্ধান পেয়েছেন। ডেমরা, শনির আখড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তারা দেখেন, বস্ত্রকলের রঙ দিয়ে ভেজাল, নকল ও বিষাক্ত চিপস তৈরি করা হচ্ছে। কারখানা থেকে তারা বস্ত্রকলের রঙ উদ্ধার করেছেন। কারখানা শ্রমিকরা জানান, ময়দার সাথে লবণ, লাল, হলুদ ও সবুজ রঙ মিশিয়ে তারা চিপস তৈরি করে বাজারজাত করেন। আলুর সাথে রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হয় পটেটো চিপস। এই বিষাক্ত, চিপস দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করে বিভিন্ন কোম্পানির নামে বাজারজাত করে আসছে বলে জানা যায়। শিশু-বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে শিশুদের মধ্যে কিডনি, লিভার ও স্নায়ুরোগ ছাড়াও অ্যালার্জি, ডায়রিয়াসহ নানা রকম সংক্রামক ব্যাধিতে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ৩০ লাভ শিশু কিডনি রোগে ভুগছে এবং ছয় হাজার শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. সালমা জাহান বলেন, রঙ মিশিয়ে তৈরি খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে কিডনি ও লিভারের জটিল রোগ্যব্যাধি এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন মরণব্যাধিতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। সূত্র : দৈনিক নয়াদিগন্ত ২৫ জানুয়ারি, সোমবার

 

advertisement