একটি ভুল ঘটনা : হযরত আবু বকর রা.-এর চট পরিধান করা
অনেক বক্তাকেই এই চটকদার কাহিনী বলতে শোনা যায়। ‘একবার হযরত আবু বকর রা. আল্লাহর রাস্তায় দান করতে করতে সবকিছু দান করে দিলেন। এমনকি তিনি নিজের গায়ের পোশাকও দান করে দিলেন। এখন তিনি সতর ঢাকার জন্য ছালার চট পরিধান করলেন। হযরত আবু বকরের এই কাজ আল্লাহ এত পছন্দ করলেন যে, সমস্ত ফেরেশতাকে ডেকে বললেন, আমার হাবীবের দোস্ত আবু বকর নিজের সবকিছু দান করে চট পরিধান করেছে। সুতরাং তোমরাও তার অনুসরণে চট পরিধান কর। সমস্ত ফেরেশতা তখন দীর্ঘ তিনদিন পর্যন্ত চট পরিধান করে ছিলেন।’’
আল্লাহর রাস্তায় দান করার ফযীলত বা আবু বকর রা.-এর ফযীলত হিসেবে অনেকে ঘটনাটি বলে থাকেন। কিন্তু আসলে এটি একটি জাল বর্ণনা যা উশনানী নামক জনৈক মিথ্যাবাদী কর্তৃক জালকৃত।
ইবনুল জাওযী রাহ. তাঁর আলমাউযুআত কিতাবে (খ. ১ পৃ.৩১৪) বলেন, ‘এটা উশনানীর জালকৃত বর্ণনা।’
সুয়ূতী রাহ. আললাআলিল মাছনূআ-তে (১ : ২৬৯) বলেন, ‘এটি একটি জাল বর্ণনা যা উশনানী কর্তৃক জালকৃত।’
এছাড়া দেখুন, আলফাওয়াইদুল মাজমূআ ১:৩৩২; তানযীহুশ শারীআহ ১:৩৯১
তার জালকৃত বর্ননা নিম্নরূপ :
‘জিবরীল আ. একবার চট পরিহিত অবস্থায় নবীজীর কাছে আগমন করলেন। নবীজী বললেন, হে জিবরীল! আপনাকে তো এমন পোশাকে কখনো দেখিনি? উত্তরে জিবরীল আ. বললেন, আল্লাহ তাআলা আসমানে সকল ফেরেশতাকে এই পোশাক পরতে নির্দেশ করেছেন। কারণ আবু বকর যমীনে এই পোশাক পরেছে।’’ এই হল তার জালকৃত বর্ণনা। কিন্তু কাহিনীকাররা এর সাথে আগে পরে আরো কথা যোগ করে আরো চটকদাররূপে বর্ণনা করে। আর আবু বকর রা.-এর ফযীলত বা তাঁর দান করার ঘটনা তো সহীহ হাদীসেই বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো বলা উচিত।
হাদীস শরীফে এসেছে, ওমর রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দান করার নির্দেশ দিলেন। তখন আমার হাতে বেশ সম্পদও ছিল। আমি মনে মনে বললাম, আজ আমি আবু বকরের চেয়ে অগ্রগামী হব। আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নবীজীর দরবারে পেশ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছ (হে ওমর!)? আমি বললাম, অনুরূপ অর্ধেক রেখে এসেছি।
তারপর আবু বকর তাঁর সমস্ত সম্পদ নিয়ে হাজির হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু বকর! পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছ? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি কখনোই তাঁর চেয়ে অগ্রগামী হতে পারব না। (জামে তিরমিযী, হাদীস:৩৬৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস:১৬৮০; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস:১৫১০)