মুহাররম ১৪৩১   ||   জানুয়ারী ২০১০

মাদক: দেখতে চাই চিকিৎসকদের উজ্জ্বল মুখ

খসরূ খান

পেশা তাদের চিকিৎসা হলেও মাদকের নেশায় তারা ডুবে আছেন। এ দেশের চিকিৎসক সমাজের নানা বিষয় নিয়ে ইতিপূর্বে আলোচনা উঠলেও দলবদ্ধ মাদকাসক্তির খবর ও অভিযোগ সংবাপত্রে শিরোনাম হওয়ার ঘটনা সম্ভবত এটাই প্রথম। গত ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতার ৮-এর কলামের রিপোর্টটির শিরোনামই ছিল- ‘পেশা চিকিৎসা/নেশা মাদকের’

রিপোর্টটির এক জায়গায় বলা হয়েছে-‘সমপ্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের) উপাচার্যকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের মাদকাসক্ত হওয়ার বিয়ষটি উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহিরাগত মাদকসেবীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু চিকিৎসক মাদক সেবন করছেন। ... রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির ছেলে ও এক সময় ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন এমন একজন চিকিৎসক মাদকসেবীদের একটি চক্র গড়ে তুলেছেন, এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।’ খবরে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধশতাধিক চিকিৎসক নিয়মিত মাদক গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব চিকিৎসক নিয়ে অস্বস্থিতে আছে। অভিযোগ যাচাই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে এসব চিকিৎসককে শাস্তি দেবে কর্তৃপক্ষ। ওখানকার প্রায় পঞ্চাশজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের মধ্যে নাক-কান-গলা রোগের কয়েকজনসহ সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে এনেসথেসিওলজি বিভাগের বিরুদ্ধে। ওই বিভাগের প্রায় ছয়জন চিকিৎসক নিয়মিত মাদক সেবন করে থাকেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মারাত্মক অভিযোগ হল, নিজ কর্মস্থলে কর্মরত থাকা অবস্থায়ও কিছু সংখ্যক চিকিৎসককে প্রায়ই মাদক সেবন করতে দেখা যাচ্ছে,যা সম্পূর্ণ পেশাগত নীতি - নৈতিকতার পরিপন্থী ও বে-আইনী। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সন্ধ্যার পর বেশ কয়েকজন চিকিৎসক বহিরাগতদের নিয়ে গাঁজা ও ফেনসিডিল সেবন করেন। আবার টিনশেডেও কোনো কোনো দিন মাঝরাত অবধি মাদকের আসর চলে। মদ, গাঁজা ছাড়াও এসব চিকিৎসক নানা ধরনের ওষুধকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করেন। এসব অভিযোগ যাচাই করার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ এখন ডাক্তারদের ডোপ টেস্ট বা প্রশ্রাব পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও ভাবছেন। ওই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক সহকারী উপাচার্য বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত এবং পরবর্তীতে সংশোধন না হলে পুরোপুরি বরখাস্ত করা হবে এবং নিবন্ধনও বাতিল করা হবে।

দেশের একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যায়ের ডাক্তারদের দু’এক জন নন, প্রায় পঞ্চাশজনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ও প্রকাশিত এই গুরুতর অসদাচরণের সংবাদে সাধারণ নাগরিকদের মাঝে হতাশা নেমে আসা খুবই স্বাভাবিক। এতদিন চিকিৎসক সমাজের বিরাট একটি অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ চলে এসেছে তাদের সেবার মান, আন্তরিকতা, দক্ষতা, ব্যবসা প্রবণতা ও রাজনৈতিক হানাহানি নিয়ে। এখন অভিযোগ উঠলো মাদক সেবনের এবং কারো কারো বিরুদ্ধে কর্মস্থলে কর্মরত অবস্থায়ও। এরচেয়ে শংকা ও হতাশার খবর আর কী হতে পারে। চিকিৎসা পেশার মতো একটি স্পর্শকাতর পেশায় নিয়োজিত মেধাবী পেশাজীবীদের মাঝে যদি এভাবে মাদকের মহামারি চলতে থাকে তাহলে অসুস্থ মানুষের মনে স্বস্থি কীভাবে আসবে?
নানা অসুখ ও ব্যধিতে ভুগতে থাকা দেশের মানুষ কোথায়-কার কাছে যাবে? উঁচু সারিতে পচনের এই বেদনাদায়ক পর্বটির নিয়ন্ত্রণ ও সমাপ্তি না ঘটলে দেশের সামনে অবশ্যই অন্ধকার অপেক্ষা করছে। এর বিপরীতে আমরা সে অন্ধকারভেদী আলোর রেখা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

নামকা-ওয়াস্তে যাচাই-তদন্ত আর রাজনৈতিক ভেদবুদ্ধিতাড়িত শায়েস্তা-করণ প্রক্রিয়ার বাইরে এসে গোটা চিকিৎসক সমাজের মুখকে আরো উজ্জ্বল করে তোলার যথার্থ ও কার্যকর কর্মপন্থা গ্রহণের আহ্বান জানাতে চাই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রতি।

 

advertisement