রবিউল আউয়াল ১৪৩৫   ||   জানুয়ারি ২০১৪

হারামাইনের মিম্বর থেকে

মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারার সম্মানিত খতীবগণের জুমার খুতবার সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হয়। এবারের খুতবাটিতে সম্মানিত খতীব নেয়ামতের শুকর আদায় করার গুরুত্ব ও তার পন্থা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

মাসিক আলকাউসার-এর জন্য খুতবাটির সারসংক্ষেপ অনুবাদ করে পাঠিয়েছেন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মাওলানা শাহাদাত হুসাইন 

শোকর দ্বারা নেয়ামত অব্যাহত থাকে

ড. সালেহ ইবনে মোহাম্মদ আলে তালেব

০৫/০১/১৪৩৫ হি.  

শায়খ সালেহ ইবনে মোহাম্মদ আলে তালেব-এর খুতবার বিষয় ছিল, নেয়ামতের শুকরিয়া দ্বারা তা অব্যাহত থাকে। এতে তিনি বান্দার উপর আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের আলোচনা করেন; আসলে যা অসংখ্য ও অগণিত। তিনি বলেন, বান্দার করণীয় হল, আল্লাহ তাকে যে  নেয়ামত দিয়েছেন ও বালা-মুসীবত থেকে রক্ষা করেছেন সেজন্য সবসময় কৃতজ্ঞতা আদায় করা। নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ সে যে আল্লাহর অসন্তুষ্টির পথে নেয়ামতকে ব্যয় করে। যে সতর্ক থাকে সে-ই নিরাপদে থাকে আর যে উদাসীন হয় তাকে অনুশোচনা করতে হয়। ‘‘হে লোক সকল! তোমাদের উপর আল্লাহর যে সমস্ত নেয়ামত রয়েছে তা স্মরণ কর। আল্লাহ্ ছাড়া এমন কোন স্রষ্টা আছে কি যিনি আসমান ও যমীন থেকে তোমাদের রিযিক পৌঁছে থাকেন? তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই; অতএব উল্টোপথে তোমরা কোথায় যাচ্ছ?’’-সূরা ফাতের, আয়াত : ৩

আল্লাহ্ আআলা শোকর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর অন্যথা করতে নিষেধ করেছেন। শুকরিয়াকারীদের প্রশংসা করে তিনি তাদের জন্য উত্তম পুরস্কারের ওয়াদা করেছেন। তাছাড়া শুকরিয়া আদায়কে নেয়ামত বৃদ্ধির কারণ সাব্যস্ত করেছেন এবং একে সন্তুষ্টির একটি উদ্দেশ্য হিসেবে বয়ান করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন-‘‘আল্লাহ্ তাআলা তোমাদেরকে বের করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমতাবস্থায় যে তোমরা কিছুই জানতে না এবং তিনিই তোমাদেরকে দিয়েছেন কান, চোখ ও হৃদয়সমূহ যেন তোমরা তাঁর শোকর কর!’’।-সূরা নাহল, আয়াত : ৭৮

অন্যত্র শুকরিয়াকে ইবাদত সাব্যস্ত করে আল্লাহ্ বলেন, ‘‘আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর যদি তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে থাক!’’-সূরা বাকারা, আয়াত : ১৭২ 

শোকর হচ্ছে অনুগ্রহকারীর প্রশংসা করা। কোন মুসলিম আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনকারী হতে পারে না যতক্ষণ না সে তার অন্তর, যবান ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে তার রবের কৃতজ্ঞতা আদায় করে। ফলে তার হৃদয়ের গভীরে এই বিশ্বাস পোষণ করে যে তার নিকট প্রতিটি নেয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও ইহসান। ফলে আল্লাহর হামদ ও কৃতজ্ঞতাসহ তার যবানেও সে নেয়ামতের আলোচনা হয়। আল্লাহ্ তাআলা যেমন বলেছেন, ‘‘আর আপন রবের দান সমূহের আলোচনা করতে থাকুন’’-সূরা দুহা, আয়াত : ১১

নেয়ামতের প্রকৃত শুকরিয়া আদায় হয় নেয়ামতদাতার সন্তুষ্টি মোতাবেক সেটা ব্যবহারের দ্বারা। কিন্তু যে আল্লাহর নাফরমানিতে তার নেয়ামতকে ব্যবহার করে সে আসলে নেয়ামতের না-শোকরী করে। ফলে সে নিজেকে নেয়ামতদাতার শাস্তির মখোমুখি করে। শোকর আদায় শুধু মুখে প্রশংসার নাম নয় বরং কাজে-কর্মে  এবং ভাবেও সেটার প্রকাশ ঘটবে। আল্লাহ্ আআলা ইরশাদ করেন, ‘‘হে দাউদের বংশধরগণ! তোমরা সকলে শোকরানা স্বরূপ নেক কাজ কর; বস্ত্তত আমার বান্দাগণের মধ্যে শোকরগুযার লোক কমই হয়ে থাকে’’-সূরা সাবা, আয়াত : ১৩

অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন, ‘‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ রাখব, আর আমার শোকর কর এবং আমার না-শোকরী কর না!’’-সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫২

শুকরিয়া হল বান্দার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম, আল্লাহ্ বলেন, ‘‘আর যদি তোমরা শোকর কর, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন’’ -সূরা যুমার আয়াত : ৭ এবং তা আযাব থেকেও নিরাপত্তা দেয়, ‘‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে কি করবেন? (কেননা তোমাদেরকে শাস্তি দেয়ার উপর আল্লাহর কোন কাজ আটকে নেই) যদি তোমরা শোকরগুযারী কর এবং ঈমান আন;’’-সূরা নিসা, আয়াত : ১৪৭

হযরত কাতাদা রাহ. বলেন, আল্লাহ্ কৃতজ্ঞ ও মুমিন বান্দাকে আযাব দেন না। এমনিভাবে শোকর আদায় নেয়ামত বৃদ্ধির কারণও বটে। আল্লাহ্ আআলা ইরশাদ করেন, ‘‘আর তোমরা স্মরণ কর যখন তোমাদের রব তোমাদের জানিয়ে দিলেন, যদি তোমরা শোকর কর তবে তোমাদেরকে নেয়ামত বাড়িয়ে দিব।’’-সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৭

হাসান বসরী রাহ. বলেন, আল্লাহ্ তাআলা নেয়ামত ভোগের সুযোগ দান করেন; যখন সেটার শুকরিয়া না করা হয় তখন নেয়ামতকে আযাবে পরিবর্তন করে দেন। শোকরিয়ার এই উচ্চ মর্যাদার কারণে শয়তানের কাজ হল মানুষকে তা থেকে বাধা দেয়া। ‘‘অতপর তাদের উপর আক্রমণ করব, তাদের সামনে থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকেও; আর আপনি তাদের অধিকাংশকে শোকরগুযার পাবেন না।’’-সূরা আরাফ, আয়াত : ১৭

এ জন্য প্রত্যেক নবী আল্লাহর কাছে তাঁর নেয়ামতের শোকর আদায়ের তাওফীক চাইতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অত্যধিক ইবাদতের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী বান্দা হব না?’’-সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম হযরত মুআয রাযি. কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসিয়ত করেন যে, প্রত্যেক নামাযের পর এই দোয়া কখনো ছাড়বে না!

اَللهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

হে আল্লাহ্! আপনার যিকির, শোকর ও ইবাদত আদায়ে আমাকে সাহায্য করুন!-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৫২২

আল্লাহর নেয়ামতরাজীর অকৃতজ্ঞতার নমুনা হচ্ছে, অপচয়, অপব্যয়,  অবাধ্যতা এবং এমন বিষয় নিয়ে গর্ব করা যা আল্লাহর অসস্ত্তষ্টি, ক্রোধ ও গযব টেনে আনে। ‘‘কখনো নয়, নিশ্চয় মানুষ সীমালংঘন করে থাকে। কেননা সে নিজেকে মনে করে স্বয়ংসম্পূর্ণ’’। সূরা আলাক্ব, আয়াত : ৬, ৭। সুতরাং এমন লোকদের দলভুক্ত হবেন না যারা আল্লাহর নেয়ামতের পরিবর্তে কুফরি করেছে

এবং তাদের কওমকে ধ্বংসের গহবরে নামিয়ে এনেছে! ষ   

 

 

advertisement