শাওয়াল ১৪৩০   ||   অক্টোবর ২০০৯

হজ্জ্ব: যা দান করে আত্মত্যাগ ও আত্মনিবেদনের শিক্ষা

শাওয়াল মাস থেকে ‘আশহুরে হজ্বে’র সূচনা হয়েছে । এ সময় থেকেই হাজীরা ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহর দিকে যাত্রা আরম্ভ করেন। আল্লাহর ঘরের তওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সায়ী এবং মক্কা-মদীনার মোবারক স্থানসমূহে অবস্থান করে আল্লাহ তাআলার বন্দেগীতে মগ্ন থাকেন। যিলহজ্ব মাসের নির্ধারিত তারিখে হজ্বের নির্ধারিত আমলসমূহ সম্পন্ন করার মাধ্যমে তাদের হজ্ব সমাপ্ত হয়। প্রতি বছর এভাবেই আশহুরে হজ্ব আসে এবং নির্ধারিত সময়ে তা বিদায় নেয়, তবে তা মুমিনের জন্য রেখে যায় গভীর শিক্ষা ও মুবারক পয়গাম। সে পয়গাম ইতাআত ও কুরবানীর। আল্লাহর আদেশে হযরত ইবরাহীম আ. স্ত্রী ও পুত্রকে রেখে আসেন জনমানবহীন প্রান-রে। অতঃপর তাঁরই নিকটে দুআ করেন, ইয়া আল্লাহ! তোমার পবিত্র ঘরের নিকটে তরুলতাহীন প্রান্তরে আমার সন্তানকে রেখে গেলাম যেন তারা সালাত কায়েম করে। ইয়া পরওয়ারদেগার! মানুষের অন্তরকে ধাবিত কর তাদের প্রতি এবং তাদেরকে রিযিক দাও ফলফলাদী। যেন তারা তোমার শোকরগোযারী করে।’ পুণ্যাত্মা জননী শুধু এই বিশ্বাসে সন্তানকে বুকে চেপে ধরে রইলেন যে, ‘আমাদের আল্লাহ কখনো আমাদের ধ্বংস হতে দেবেন না। আল্লাহ তাআলা সেই পবিত্রভূমিকে আবাদ করলেন। এরপর ইবরাহীম আ. যখন পুত্র ইসমাইলকে বলেন, ‘‘প্রিয় পুত্র, আমি স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে কুরবানী করছি। এবার তোমার মতামত বল। পুত্র বলেন, সম্মানিত পিতা, আপনি তা পালন করুন যা করতে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন। অবশ্যই আপনি আমাকে সবরকারীদের অন-র্ভুক্ত পাবেন।’ আল্লাহর খলীল ও তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগ ও আত্মনিবেদনের স্মৃতি ধারণ করে বায়তুল্লাহ ও ছাফা-মারওয়া আল্লাহর মুমিন বান্দাদের হজ্বের আহ্বান জানায় এবং এই পুণ্যভূমি থেকে ত্যাগ ও কুরবানীর এবং আনুগত্য ও আত্মনিবেদনের শিক্ষা গ্রহণের পয়গাম শোনায়। বস'ত এটিই হজ্বের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এবং তা আল্লাহর কাছেও সবচেয়ে প্রিয়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই আল্লাহ তাআলা তাঁর খলীলের স্মৃতিকে সমুন্নত করেছেন। হজ্ব শুধু আত্মনিবেদনের শিক্ষাই দেয় না; বরং তার সঠিক পন্থা ও পদ্ধতিও নির্দেশ করে। বান্দা চূড়ান-ভাবে শুধু আল্লাহর সামনেই নিবেদিত হতে পারে। তাই আত্মনিবেদনের চূড়ান-রূপ-বন্দেগী ও উপাসনা, কেবল আল্লাহরই জন্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আমার নামায, আমার ইবাদত (হজ্ব ও কুরবানী), আমার জীবন, আমার মরণ একমাত্র আল্লাহরই জন্য (নিবেদিত) যিনি রাব্বুল আলামীন।’ চিন্তা ও কর্মের চূড়ান- আনুগত্যও আল্লাহরই জন্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তার পালনকর্তা তাকে বললেন, অনুগত হও তিনি বললেন, আমি অনুগত হলাম রাব্বুল আলামীনের।’ বস্তুত একেই বলে ইসলাম। আত্মনিবেদন এবং একমাত্র আল্লাহরই জন্য আত্মনিবেদন ইসলামের শিক্ষা। আল্লাহ তাআলার শর্তহীন আনুগত্য এবং সে আনুগত্যের পথে সকল পর্যায়ের আত্মত্যাগ হচ্ছে ইসলামের মৌলিক পয়গাম। হজ্বের সূচনামাসে আমরা যেন এই পয়গামকে অনুধাবন করি এবং চিন্তায় ও কর্মে তা প্রতিফলিত করার চেষ্টা করি। আমীন। বিগত সংখ্যাগুলোতে হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর হজ্ব সফরনামা - ‘বায়তুল্লাহর মুসাফির’ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল, যা ছিল বায়তুল্লাহর মুসাফিরগণের যথার্থ সফরসঙ্গী। বর্তমান সংখ্যায় সফরনামাটির উপর আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর একটি অনুভূতিমূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যাতে তাঁর মূল্যবান অভিব্যক্তির পাশাপাশি ‘হজ্ব সফরনামা’থেকে গ্রহণীয় মৌলিক বিষয়গুলো সুচিহ্নিত হয়েছে। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে মোবারক সফরনামাটি থেকে উপকৃত হওয়ার এবং হজ্বের সফরকে অধিকতর অর্থবহ ও তাৎপর্যমণ্ডিত করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাওয়া যাবে। হজ্বের মাসাইল ও অন্যান্য প্রসঙ্গ ইতিপূর্বে আলকাউসারে প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহী পাঠক অনুগ্রহ করে ডিসেম্বর ’০৫, ’০৬ ও ’০৭ ঈসায়ী সংখ্যাগুলো দেখে নিতে পারেন।

 

advertisement